ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে নতুন দরপত্র আহ্বান করবে সরকার

ঢাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের স্থবির কাজ, নতুন ঠিকাদার নিয়োগের অপেক্ষায় প্রকল্প এলাকা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ ফেলে পালিয়েছে ঠিকাদাররা, ফলে সরকার নতুন করে দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নিয়েছে। ছবি প্রতীকি

অনলাইন ডেস্ক:

রাজনৈতিক অস্থিরতার পর প্রকল্পে স্থবিরতা

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর উন্নয়ন কার্যক্রম বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। প্রায় শতাধিক প্রকল্পের ঠিকাদার চুক্তি ভঙ্গ করে পালিয়ে গেছে। অনেক ঠিকাদার প্রকল্পের টাকা তুলেও কোনো কাজ করেনি। এতে অগ্রাধিকারভিত্তিক উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সূত্র বলছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই–আগস্ট) মাত্র ২.৩৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে এ হার ছিল ২.৫৭ শতাংশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলেও ঠিকাদার অনুপস্থিতি ও প্রকল্প পরিচালকের ঘাটতির কারণে এই ধীরগতি দেখা দিয়েছে।


নতুন দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত

পর্যালোচনা সভায় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে—যেসব প্রকল্পে ঠিকাদাররা পালিয়েছে, সেসব প্রকল্পে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে। তবে এবার অনলাইন পদ্ধতিতে দরপত্র প্রক্রিয়া হবে যাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।

সরকার আশা করছে, নতুন ক্রয়নীতির গেজেট প্রকাশ হলে পালিয়ে যাওয়া ঠিকাদাররা আর বেনামে দরপত্র নিতে পারবে না। এতে নতুন ও যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো কাজের সুযোগ পাবে। বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ কয়েকটি সংস্থা নতুন নীতিমালা কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।


প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে সংকট

আরেকটি বড় সমস্যা হলো প্রকল্প পরিচালক বা পিডি নিয়োগ। আগে কর্মকর্তারা এই পদে আসতে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু বর্তমানে অনেকেই নিয়োগ পেয়েও যোগ দিচ্ছেন না।

কারণ, অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে সরকারের কঠোর অবস্থান। ফলে পিডি পদে এসে দায়িত্ব নিতে অনেকেই অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। সরকার এজন্য নতুন নীতিমালা আনার উদ্যোগ নিয়েছে—যেখানে পিডিদের কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।


প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি

প্রকল্প পরিচালক ও কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে পরিকল্পনা কমিশন প্রস্তাব করেছে—

  • সার্টিফিকেশন কোর্স চালু করা হবে (পরিকল্পনা প্রক্রিয়া, সরকারি অর্থব্যবস্থাপনা, ক্রয়বিধি-২০০৮ বিষয়ে)।
  • প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের জন্য সংস্থা পর্যায়ে বাজেট বরাদ্দ থাকবে।
  • ডিপিপি প্রণয়নের শুরু থেকেই ফোকাল পার্সন নিয়োগ দেওয়া হবে এবং তাকেই পরবর্তীতে প্রকল্প পরিচালক করা হবে।
  • মানসম্মত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে এবং তা স্বাধীন বিশেষজ্ঞ দ্বারা মূল্যায়ন করতে হবে।

তদারকি জোরদার

সরকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর তদারকি বাড়াতে চায়। এজন্য বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)-এর কার্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব এসেছে।

এছাড়া খাতভিত্তিক অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এতে অপ্রয়োজনীয় বা ত্রুটিপূর্ণ প্রকল্প প্রস্তাবনা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।


কাঠামোগত সমস্যাগুলো

প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়েকটি বড় সমস্যার দিক তুলে ধরা হয়েছে—

  • দুর্বল প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি)।
  • অদক্ষ জনবল ও প্রশিক্ষণের অভাব।
  • প্রকল্প পরিচালকের পদে অনাগ্রহ।
  • পুরনো ঠিকাদারদের অনিয়ম ও পালিয়ে যাওয়া।
  • ক্রয় আইন জটিলতা।

এগুলোর সমাধানেই নতুন নীতিমালা, অনলাইন দরপত্র, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্বচ্ছ তদারকির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।


সারসংক্ষেপ

শতাধিক প্রকল্পে কাজ ফেলে পালানো ঠিকাদারদের কারণে উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। সরকার এখন নতুন করে দরপত্র আহ্বান করতে যাচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট নীতি, অনলাইন টেন্ডার, প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এডিপি বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে শুধু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নয়, প্রকল্প ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *