আগামী নির্বাচন গণতন্ত্রের নতুন ভিত্তি : প্যারিসের মেয়রের সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস

নিউইয়র্কে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগোর বৈঠক, যেখানে আসন্ন নির্বাচন, রোহিঙ্গা সংকট ও সামাজিক ব্যবসা নিয়ে আলোচনা হয়। নিউইয়র্কে প্যারিসের মেয়রের সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস : নির্বাচন ও মানবিক সংকট নিয়ে আলোচনা, ছবি প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক

অনলাইন ডেস্ক:

নিউইয়র্ক, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫:

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মঙ্গলবার নিউইয়র্কে প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, ক্রীড়া ও সামাজিক ব্যবসার ভবিষ্যৎ, এবং বৈশ্বিক মানবিক সংকট বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন শুধু একটি সাধারণ ভোট নয়, বরং দেশের গণতন্ত্রের নতুন যুগের সূচনা করবে।”


বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আসন্ন নির্বাচন

বাংলাদেশ বর্তমানে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে রয়েছে, যার নেতৃত্বে চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কার। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচন হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই নির্বাচন দেশের জনগণকে একটি নতুন আস্থার জায়গায় নিয়ে যাবে এবং গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। তাঁর ভাষায়, “এটি কেবল নির্বাচন নয়, এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যত গণতান্ত্রিক কাঠামো নির্ধারণের একটি ভিত্তি।”


সামাজিক ব্যবসা ও ক্রীড়া খাতে নতুন দিগন্ত

বৈঠকে ক্রীড়া ও সামাজিক ব্যবসার সম্ভাবনা বিশেষভাবে আলোচিত হয়। অধ্যাপক ইউনূস ইতোমধ্যেই প্যারিস ২০২৪ অলিম্পিক-এ সামাজিক ব্যবসার মডেল প্রবর্তনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বৈঠকে বলেন, ভবিষ্যতের সকল অলিম্পিক বিশেষ করে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক-কে কার্বন নিরপেক্ষ করতে হবে।

মেয়র হিদালগো এই প্রসঙ্গে বলেন, অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বকে এক নতুন চিন্তার দিক দেখিয়েছেন। তাঁর উদ্যোগ মানবতার জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত।


রোহিঙ্গা সংকট : বৈশ্বিক মনোযোগ ফেরানোর আহ্বান

বৈঠকে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট ছিল একটি প্রধান আলোচ্য বিষয়। বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে প্রায় এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে। উভয় নেতা তাদের জীবনমান উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাড়তি সহায়তার আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করছে, যার উদ্দেশ্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে বৈশ্বিক মনোযোগ ফিরিয়ে আনা এবং একটি স্থায়ী সমাধান খোঁজা।

মেয়র হিদালগো আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে একদিন রোহিঙ্গারা নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের নিজস্ব মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে সক্ষম হবে।


মানবিক সহযোগিতা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে মেয়র হিদালগোকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, এ সফর দুই দেশের মধ্যে মানবিক সহযোগিতা ও সামাজিক ব্যবসার ক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করবে।

মেয়র হিদালগোও অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, “আপনার নেতৃত্ব মানবতার জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।”


এসডিজি ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। তিনি জানান, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য এই ধরনের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অধ্যাপক ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন হবে গণতন্ত্র, সামাজিক ব্যবসা, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মিশ্রণে।


বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে দেশজুড়ে আশা ও প্রত্যাশার সঞ্চার হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্য এবং প্যারিসের মেয়রের আস্থা গণতন্ত্রের নতুন যাত্রাকে আরও শক্তিশালী করেছে।

বিশ্ব মানবতার সংকট সমাধান, বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। একই সঙ্গে সামাজিক ব্যবসা ও ক্রীড়ার মাধ্যমে মানবিক সহযোগিতা বাড়ানোর দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে।

এমন বৈঠকগুলো শুধু দুই নেতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এগুলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে আস্থা ও সহযোগিতার প্রতীক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *