অনলাইন ডেস্ক:
সরকারি প্রশাসনে আবারও বড় ধরনের রদবদল হলো। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দুই দফায় মোট ২৬৮ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব মোহাম্মদ রফিকুল হক স্বাক্ষরিত দুটি প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রথম প্রজ্ঞাপনে একসাথে ২৬২ জন সিনিয়র সহকারী সচিবকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অন্য প্রজ্ঞাপনে দেশের বাইরে বাংলাদেশি দূতাবাস ও মিশনে কর্মরত আরও ছয়জন কর্মকর্তার পদোন্নতি ঘোষণা করা হয়।
পদোন্নতির আদেশ
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা “জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উপসচিব)” হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। তবে যেসব কর্মকর্তার কর্মস্থল ইতিমধ্যেই পরিবর্তিত হয়েছে, তারা সংশ্লিষ্ট নতুন দফতরের নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে যোগদানপত্র জমা দেবেন। এ ছাড়া, ভবিষ্যতে কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো নেতিবাচক তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে কর্তৃপক্ষ এ পদোন্নতি বাতিল বা সংশোধনের ক্ষমতা রাখে।
কীভাবে যোগদান করতে হবে
প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যোগদানপত্র সরাসরি সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দিতে পারবেন। চাইলে অনলাইনেও জমা দেওয়া যাবে—sa1@mopa.gov.bd এই ঠিকানায় ই-মেইলের মাধ্যমে। তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হওয়া এই আদেশে লেখা আছে—“জনস্বার্থে জারীকৃত”।
বিদেশে কর্মরতদের বিশেষ প্রজ্ঞাপন
যেসব কর্মকর্তা বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস ও মিশনে প্রথম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের জন্য ছিল আলাদা প্রজ্ঞাপন। সেই তালিকায় ছয়জন কর্মকর্তার নাম রয়েছে। তাঁরা উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পেলেও আপাতত তাঁদের কাজের দায়িত্ব ও অবস্থান একই থাকবে।
কেন এতদিন পর পদোন্নতি?
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩০তম ব্যাচ ২০১২ সালের ৩ জুন যোগদান করেছিল। নিয়ম অনুযায়ী, সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পাঁচ বছর এবং মোট সরকারি চাকরিতে দশ বছর পূর্ণ করার পরই উপসচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন হয়। সেই হিসাবে ২০২২ সালের জুন থেকে তাঁরা পদোন্নতির জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন। অবশেষে ২০২৫ সালের আগস্টে সেই সুযোগ এলো।
প্রশাসনে সংখ্যার চিত্র
বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে অনুমোদিত পদের তুলনায় অনেক বেশি কর্মকর্তা কাজ করছেন। অতিরিক্ত সচিবের পদ অনুমোদিত ২১২ হলেও সেখানে কাজ করছেন ৩৫৮ জন। যুগ্ম সচিবের অনুমোদিত সংখ্যা ৫০২ হলেও কর্মরত আছেন ১,০২৮ জন। আর উপসচিবের অনুমোদিত ১,৪২০ পদের বিপরীতে কাজ করছেন প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা। নতুন পদোন্নতির ফলে এ সংখ্যাটা আরও বেড়ে গেল।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
প্রশাসনে পদোন্নতি মানেই দায়িত্ব ও প্রভাবের বিস্তার। তবে শূন্যপদ না থাকায় অনেককে ‘ইন-সিটু’ বা আগের জায়গাতেই থাকতে হচ্ছে। এতে পদমর্যাদা বেড়ালেও বাস্তবে কাজের জায়গায় কোনো পরিবর্তন হয় না। তবুও কর্মকর্তাদের কাছে এই পদোন্নতি সম্মান ও ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
২৮ আগস্টের প্রজ্ঞাপন শুধু সংখ্যার দিক থেকে নয়, প্রশাসনিক কাঠামোতেও গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষমাণ ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা যে স্বস্তি পেলেন, তা নিশ্চিতভাবেই ভবিষ্যতে প্রশাসনের কাজকে আরও গতিশীল করবে।
