অনলাইন ডেস্ক:
বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সাহসী কণ্ঠস্বর, ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক আর নেই। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর ২০২৫) রাত ১০টা ১২ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
জন্ম ও শৈশব
আহমদ রফিক ১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শাহবাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি মেধাবী ও চিন্তাশীল ছিলেন। স্কুল-কলেজ জীবনে সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি গভীর অনুরাগ গড়ে ওঠে।
ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আহমদ রফিক সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তিনি কেবল অংশগ্রহণকারীই ছিলেন না, বরং ছাত্রদের সংগঠিত করার কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একমাত্র ছাত্র হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এই সময় থেকেই তিনি সাহসী, অকুতোভয় ভাষাসৈনিক হিসেবে পরিচিতি পান।
সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদান
আহমদ রফিক শুধু ভাষাসৈনিক নন, তিনি ছিলেন এক বহুমাত্রিক চিন্তাবিদ, লেখক ও গবেষক।
- ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ।
- সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজ ভাবনা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর লেখনী ছিল প্রখর।
- শতাধিক বই তিনি রচনা ও সম্পাদনা করেছেন।
- রবীন্দ্রচর্চা, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও সমকালীন সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ে তাঁর গবেষণা এখনো গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত।
ব্যক্তিজীবন ও শেষ অধ্যায়
২০০৬ সালে স্ত্রীকে হারানোর পর থেকে তিনি একাই বসবাস করতেন ঢাকার নিউ ইস্কাটনের গাউসনগরে। ২০১৯ সাল থেকে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকে, ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভাঙার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ২০২৩ সাল নাগাদ তিনি প্রায় দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগে তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্রনিক কিডনি ফেইলিওর, আলঝেইমার’স ডিজিজ, পার্কিনসন’স ডিজিজসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন।
সম্মাননা ও স্বীকৃতি
আহমদ রফিকের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন—
- একুশে পদক
- বাংলা একাডেমি পুরস্কার
- রবীন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার
- এবং অসংখ্য সম্মাননা
তাঁর কাজ শুধু সাহিত্যচর্চায় সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং জাতীয় চেতনা গঠনে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য।
জাতির ক্ষতি
ভাষাসৈনিক আহমদ রফিকের মৃত্যুতে জাতি হারালো এক মহান মানুষকে। তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনের জীবন্ত ইতিহাস এবং মুক্তচিন্তার অগ্রদূত। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজ ভাবনায় তাঁর অবদান আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।
ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর মৃত্যুতে জাতি শোকাহত। তবে তাঁর কর্ম ও চিন্তাধারা বাঙালি জাতিকে আগামীতেও পথ দেখাবে।
