জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ যথেষ্ট শক্তিশালী: ফখরুল

নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে স্বাগত জানালেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

নিউইয়র্ক, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ :
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যে ভাষণ দিয়েছেন, তাকে “যথেষ্ট শক্তিশালী” আখ্যায়িত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “ভাষণ যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তিনি এসব বিষয় বারবার উল্লেখ করছেন। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো সন্দেহ নেই। আমরা নিশ্চিত যে নির্বাচন ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এই হবে।”


নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে নিশ্চয়তা

বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনকালীন প্রক্রিয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এর জন্য সব রাজনৈতিক দল প্রস্তুত রয়েছে।

এ সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সরকারের সংস্কার কর্মসূচি ও জাতীয় ঐক্যের বার্তা প্রতিফলিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, এই ভাষণ শুধু দেশের জনগণ নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে।


সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ ও সংস্কার

মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে নিঃসন্দেহে সেই উদ্দেশ্যের কথাই বলেছেন, যার ভিত্তিতে তাঁদের সরকার গঠিত হয়েছিল। গণঅভ্যুত্থানের পর যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, রাজনৈতিক দল ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত আহ্বানে তাঁরা সেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।”

তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি তখন ভয়াবহ সংকটে ছিল। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই সরকার পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতির দিকে নিয়ে গেছে। এসব বিষয়ও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে।


অর্থনীতি ও রাজনৈতিক সংস্কার

বিএনপি মহাসচিব তুলে ধরেন, অধ্যাপক ইউনূস কিভাবে তাঁর সরকারকে এগিয়ে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিও মোকাবিলা করা হয়েছে।”

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই কাঠামোগত সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে আসছে।

  • ২০১৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ উপস্থাপন করেছিলেন, যেখানে রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তোলা হয়।
  • ২০২২ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন, যাতে রাষ্ট্র কাঠামো ও অর্থনৈতিক সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।

ফখরুলের মতে, আওয়ামী লীগ যে পরিস্থিতি তৈরি করেছিল তা মৌলিক পরিবর্তনকে অপরিহার্য করে তুলেছিল।


জাতীয় ঐক্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি

বিএনপি মহাসচিব অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “আমরা খুব খুশি যে, ইতিহাসে প্রথমবার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারের কাজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতিসংঘেও তাঁদের সঙ্গে রাখা হয়েছে। এটি আসলে জাতির ঐক্য প্রদর্শনের প্রতীক।”

তিনি আরও বলেন, এই উদ্যোগ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এজন্য বিএনপি পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছে এবং তারেক রহমানও একে সমর্থন জানিয়েছেন।


জামায়াতে ইসলামী ও প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR)

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল জামায়াতে ইসলামী যে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) ইস্যুতে আন্দোলন চালাচ্ছে, তার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “বিএনপি নিম্নকক্ষে পিআরের পক্ষে নয়, এমনকি উচ্চকক্ষেও এর পক্ষে আমরা কোনো বক্তব্য দেইনি।”

তবে তিনি বলেন, এ ধরনের বিষয়গুলো পরবর্তীতে রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।


আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি

জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ শুধু জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন নয়, বরং বৈশ্বিক পর্যায়েও বাংলাদেশের অবস্থানকে নতুন করে তুলে ধরেছে। মির্জা ফখরুলের মতে, ভাষণটি ছিল আত্মবিশ্বাসী, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সংস্কারমুখী।

বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে এক অস্থির সময় অতিক্রম করছে, তখন এ ধরনের বার্তা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আশাবাদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখন আর কোনো ধোঁয়াশা নেই। প্রধান উপদেষ্টার শক্তিশালী ভাষণ দেশীয় রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

জাতীয় ঐক্য, রাজনৈতিক সংস্কার, অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্ব—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *