অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জুলাই সনদ এখন এক নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষ করে এর বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। এই অনৈক্যের কারণে তাদের সহযোগী দলগুলোর ভেতরও বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে একই সঙ্গে সমঝোতার নতুন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চসহ ৯টি রাজনৈতিক দল।
বৈঠক ও আলোচনার পটভূমি
রাজধানীর হাতিরপুলের একটি রেস্তোরাঁয় গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দলের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং গণ অধিকার পরিষদের বৈঠক।
এ বৈঠক আয়োজনের পেছনে ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। প্রায় তিন ঘণ্টার আলোচনায় দলগুলোর নেতারা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অনৈক্য নিরসনে ঐকমত্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় করেন।
সাকি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ভেতরে ভেতরে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। তাই সময় বাড়ানো হয়েছে এবং দলগুলোর মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে—যাতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো সমাধান বের করা যায়।
বৈঠকের প্রধান সিদ্ধান্ত
বৈঠক থেকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে—
- রাজনৈতিক সমঝোতা ও আলোচনার দায়িত্ব
- জোনায়েদ সাকি (গণসংহতি আন্দোলন)
- মজিবুর রহমান মঞ্জু (এবি পার্টি চেয়ারম্যান)
- মো. রাশেদ খান (গণ অধিকার পরিষদ সাধারণ সম্পাদক)
- আইনগত ও সাংবিধানিক দিক দেখভালের দায়িত্ব
- হাসনাত কাইয়ূম (রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন)
- জাবেদ রাসিন (এনসিপি)
- সানী আবদুল হক (এবি পার্টি)
গণ অধিকার পরিষদের রাশেদ খান বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে যেসব অনৈক্য তৈরি হয়েছে তা নিরসনে সবাই আলোচনায় আগ্রহী। এমনকি বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গেও বসার পরিকল্পনা আছে।
সংস্কার প্রশ্নে মাঝামাঝি সমাধানের চেষ্টা
জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ জানান, এই আলোচনার উদ্দেশ্য হলো সংকট নিরসনে একটি মাঝামাঝি সমাধান খুঁজে বের করা। শিগগিরই সিপিবি ও বাসদের সঙ্গেও আলোচনা হতে পারে।
রাজনীতিবিদদের অভিমত অনুযায়ী, সংস্কার প্রশ্নে যেসব দলের অবস্থান কাছাকাছি, তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে একটি নির্বাচনী জোট বা সমঝোতা গড়ে উঠতে পারে।
এনসিপি–কেন্দ্রিক নতুন সমীকরণ
রাজনীতিতে এখন এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) বারবার আলোচনায় আসছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গঠিত এই দলকে ঘিরে আগামী নির্বাচনে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে।
- এনসিপির অনেক নেতা একসময় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হকের (নূর) অনুসারী ছিলেন।
- দলটি আত্মপ্রকাশের সময় ধারণা ছিল, নূরের দল গণ অধিকার পরিষদ এর সঙ্গে একীভূত হতে পারে। যদিও সেটা হয়নি, তবে গণ অধিকার পরিষদের কয়েকজন নেতা ইতিমধ্যে এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন।
রাশেদ খান জানান, দেশের কল্যাণে তাঁরা একসঙ্গে কাজ করতে চান, তবে দল একীভূত করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি।
বিএনপি–জামায়াত দ্বন্দ্ব ও নতুন জোটের সম্ভাবনা
রাজনৈতিক অঙ্গনে ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপি ও জামায়াতের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠছে। ফলে সংস্কার প্রশ্নে কাছাকাছি থাকা দলগুলো—গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও এনসিপি—একে অপরের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতায় যেতে পারে।
এনসিপির নেতাদের অনেকে জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও সরাসরি জোট গঠনের বিষয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। তবে রাজনৈতিক ময়দানে জামায়াতের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখার আগ্রহ অনেকের মধ্যেই রয়েছে।
উপসংহার
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জুলাই সনদ ঘিরে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা কেবল বিএনপি–জামায়াতের সম্পর্ককেই কঠিন করছে না, বরং নতুন নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের পথও খুলে দিচ্ছে। গণতন্ত্র মঞ্চ, এনসিপি, এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদসহ ৯টি দল এখন ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করছে।
আগামী দিনে এই উদ্যোগ সফল হলে হয়তো নতুন এক নির্বাচনী জোট বা রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তি তৈরি হবে। আবার ব্যর্থ হলে দ্বন্দ্ব আরও গভীর হতে পারে। সবকিছু নির্ভর করছে বিএনপি–জামায়াত ও অন্যান্য দলের সমঝোতার সক্ষমতার ওপর।
