লন্ডনে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে লাখো মানুষ, পাল্টা রাস্তায় অভিবাসীবান্ধবরা

লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ভিড় এবং পাল্টা মিছিলে অংশ নেওয়া বর্ণবাদবিরোধী মানুষ লন্ডনে অভিবাসনবিরোধী ও বর্ণবাদবিরোধী মিছিলের মুখোমুখি অবস্থান, উত্তেজনায় টানটান সেন্ট্রাল শহর, ছবি রয়টার্স

অনলাইন আন্তর্জাতি ডেস্ক:

সেন্ট্রাল লন্ডনে অভিবাসনবিরোধী ঢল

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে সেন্ট্রাল লন্ডনের রাজপথে নেমে আসে অভিবাসনবিরোধী জনতা। পুলিশের হিসেবে, প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ অংশ নেয় “ইউনাইট দ্য কিংডম” নামের এ মিছিলে।
ডানপন্থি নেতা টমি রবিনসন ছিলেন আয়োজক। তার আহ্বানেই এ বিশাল সমাবেশে যুক্ত হয় বিভিন্ন ডানপন্থি ও চরমপন্থি গোষ্ঠী।

বিক্ষোভকারীদের হাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পতাকা ছিল। অনেকে মাথায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয় টুপি “মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন” পরে এসেছিলেন। মঞ্চে রবিনসন একে “বাকস্বাধীনতার উৎসব” বলে দাবি করেন।


পাল্টা মিছিলে অভিবাসীবান্ধব সংগঠন

অভিবাসনবিরোধী ঢলের কাছেই জড়ো হয় “স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম” ব্যানারে প্রগতিশীল শক্তিগুলো। এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন অন্তত ৫ হাজার মানুষ। তাদের কণ্ঠে শ্লোগান ছিল:
বর্ণবাদ নিপাত যাক, অভিবাসীদের মর্যাদা চাই।”

অভিবাসীবান্ধব সংগঠনগুলো বলছে, লন্ডন বহুসাংস্কৃতিক নগরী—এখানে বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই। তারা অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার আহ্বান জানান।


পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও উত্তেজনা

মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভকারীরা একাধিকবার ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে পাল্টা মিছিলে পৌঁছাতে চাইলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এতে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা লাঞ্ছিত হন।

ওয়েস্টমিনস্টারসহ বিভিন্ন সড়কে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের দাবি, সংঘর্ষ আরও বড় আকার নিতে পারত, তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে আসে।


অনলাইনে ইলন মাস্কের বক্তব্য

এদিন অনলাইনে বক্তব্য রাখেন মার্কিন ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক। তিনি রবিনসনের নেতৃত্বাধীন সমাবেশকে “মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উদাহরণ” হিসেবে উল্লেখ করেন। বিশ্লেষকদের মতে, তার এই বক্তব্য চরমপন্থিদের আরও উৎসাহিত করতে পারে।


বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় সমাবেশ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে লন্ডনে ডানপন্থিদের এটিই সবচেয়ে বড় সমাবেশ। চরম ডানপন্থিদের উত্থান পশ্চিমা রাজনীতিতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করছে।

অন্যদিকে, অভিবাসীবান্ধব ও প্রগতিশীল শক্তির একত্রিত হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে। তারা বলছেন, লন্ডন একটি বহুজাতিক সমাজ, যেখানে বৈচিত্র্যই আসল শক্তি।


বাংলাদেশি কমিউনিটির পাল্টা র‌্যালি

বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসডকল্যান্ড এলাকায় বর্ণবাদবিরোধী বিশাল র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। শত শত বাংলাদেশি কমিউনিটি সদস্য রাস্তায় নেমে আসেন।

তাদের কণ্ঠে আওয়াজ ওঠে:
“ব্রিটেনে বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই।”

কমিউনিটি নেতারা বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সব অভিবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তারা অভিবাসীদের প্রতি সহমর্মিতা ও সংহতির ডাক দেন।


বহুসাংস্কৃতিক লন্ডনের প্রতিচ্ছবি

লন্ডন এমন একটি শহর যেখানে বহু ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে। এই বহুসংস্কৃতিক চিত্রই ব্রিটেনকে বৈচিত্র্যময় করেছে।

কিন্তু অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ ও বর্ণবাদী শ্লোগান সেই ঐক্যের ওপর আঘাত হানে। পাল্টা মিছিলে তাই ছিল ঐক্যের বার্তা—“এই শহরে বর্ণবাদের জায়গা নেই।”


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বিক্ষোভের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইউরোপজুড়ে ডানপন্থি উত্থান বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ।

তাদের মতে, অভিবাসীদের দোষারোপ করা সমস্যার সমাধান নয়। বরং সমাধান হতে পারে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও সমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।


উপসংহার

১৩ সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভ প্রমাণ করল লন্ডন এখন দ্বন্দ্বের শহর। একদিকে অভিবাসনবিরোধী চরমপন্থি গোষ্ঠী শক্তি বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে অভিবাসীবান্ধব প্রগতিশীল শক্তিও সমানভাবে রাস্তায় নামছে।

বাংলাদেশি কমিউনিটির অংশগ্রহণ স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—লন্ডন বহুসাংস্কৃতিক শহর, এখানে বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই।

ভবিষ্যৎ লন্ডনের রাজনীতি নির্ভর করবে এই দুই শক্তির দ্বন্দ্বে কোনটি প্রাধান্য পায় তার ওপর। তবে মানবিক দিক থেকে অভিবাসীবান্ধব অবস্থানই টেকসই সমাধান এনে দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *