জাকসু নির্বাচন ২০২৫: প্রথম ঘণ্টায় ভোটার উপস্থিতি কম, বাড়বে বলে আশা কর্মকর্তাদের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকসু নির্বাচনে প্রথম ঘণ্টায় ভোটার উপস্থিতি কম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু নির্বাচনে প্রথম ঘণ্টায় ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও প্রথম ঘণ্টায় বেশিরভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আশা, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে ভিড় বাড়বে।

প্রথম ঘণ্টার ভোটের চিত্র

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক জব্বার হল কেন্দ্র ঘুরে জানা যায়, ব্যালট পেপারে স্বাক্ষর নিতে কিছুটা সময় লেগেছে। এর ফলে প্রথম এক ঘণ্টায় মাত্র ১৩ জন শিক্ষার্থী ভোট দেন। অথচ এ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৬৫০ জন।

কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান ভূঞা জানান, “এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করছি শেষ সময় পর্যন্ত ভোটাররা আসবেন।”

শহীদ সালাম-বরকত হলে এক ঘণ্টায় ভোট পড়েছে মাত্র ২৩টি। এই হলে মোট ভোটার ২৯৯ জন। রিটার্নিং কর্মকর্তা এস এম মওদুদ আহমেদ জানিয়েছেন, ভোট শুরুর প্রথম ৪০ মিনিটে মাত্র পাঁচজন ভোট দিয়েছিলেন। তবে ধীরে ধীরে ভোটার উপস্থিতি বাড়ছে।

ভোটার সংখ্যা ও প্রার্থী

এবারের নির্বাচনে মোট ১১ হাজার ৭৪৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বিভিন্ন পদে চূড়ান্তভাবে ১৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে—

  • সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৯ জন
  • সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন
  • যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন
  • যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন

ভিপি পদে কোনো নারী প্রার্থী নেই। জিএস পদে ১৫ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন নারী। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট প্রার্থীর প্রায় ২৫% নারী, বাকি ৭৫% পুরুষ।

ভোটকেন্দ্র ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা

নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২১টি হলে ২২৪টি বুথে। এর মধ্যে ১০টি ছাত্রী হল ও ১১টি ছাত্র হল। প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন—

  • ১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা
  • ৬৭ জন পোলিং কর্মকর্তা
  • ৬৭ জন সহকারী পোলিং কর্মকর্তা

ভোটাররা এবার মোট ৪০টি ব্যালটে টিক চিহ্ন দেবেন। বিশেষ ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা সম্পন্ন হবে।

নারী প্রার্থীর সংকট

প্রার্থীদের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, নারী প্রার্থীর উপস্থিতি তুলনামূলক কম। ভিপি পদে কোনো নারী নেই। চারটি পদে কোনো নারী প্রার্থী নেই। এমনকি মেয়েদের হলগুলোর পাঁচটিতে ১৫টি পদে কোনো প্রার্থীই দাঁড়াননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা অভিযোগ করছেন, সাংগঠনিক রাজনীতিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ এখনও বাধাগ্রস্ত। তবে নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলছেন, ভবিষ্যতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলসমূহ

এবারের নির্বাচনে আটটি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বাম, ডান, শিবির, ছাত্রদল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমন্বয়।

  • ছাত্রদল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শেখ সাদী হাসান এবং জিএস পদে তানজিলা হোসেন বৈশাখী।
  • বাগাছাস সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল (ভিপি) ও আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম (জিএস)।
  • স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেল থেকে ভিপি পদে আছেন আব্দুর রশিদ জিতু এবং জিএস পদে মো. শাকিল আলী।
  • ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ এর ভিপি প্রার্থী আরিফুল্লাহ আদিব ও জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম।
  • সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলে জিএস পদে শরণ এহসান, এজিএস (পুরুষ) পদে নুর এ তামীম স্রোত এবং এজিএস (নারী) পদে ফারিয়া জামান নিকি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায় জন আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছেন।
  • ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রফ্রন্ট সমর্থিত ‘সংশপ্তক পর্যদ’ এ জিএস পদে জাহিদুল ইসলাম ঈমন ও এজিএস (নারী) পদে সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভোটারদের প্রত্যাশা

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই প্রথম দিকে কেন্দ্রে ভিড় করেননি। অনেকে ক্লাস, অনেকে সকালবেলার ব্যস্ততায় ভোট দিতে আসতে পারেননি। তবে দুপুরের পর থেকে উপস্থিতি বাড়বে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন।

একজন শিক্ষার্থী জানান, “অনেকদিন পর জাকসু নির্বাচন হচ্ছে। তাই আমরা ভোট দিতে চাই, তবে সকালে ক্লাস থাকায় আসতে পারিনি।”

নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ আসেনি। প্রথম দিকে ভোট কম হলেও দুপুরের পর পরিস্থিতি পাল্টাবে বলে তারা আশাবাদী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *