বিএসটিআই মানচিহ্ন লাইসেন্স: আবেদন প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি

বিএসটিআই মানচিহ্নযুক্ত পণ্যের সিএম লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়া ও ফি বাংলাদেশে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিতে বিএসটিআই থেকে নিতে হবে সিএম লাইসেন্স

অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশে পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তার আস্থা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)–এর মানচিহ্ন। বাজারে যে সব খাদ্য ও ভোক্তাপণ্য দেখা যায়, তার অনেকগুলোর গায়ে বিএসটিআইয়ের সার্টিফিকেশন মার্ক বা মানচিহ্ন থাকে। এই চিহ্নের অর্থ হলো, পণ্যটি নির্দিষ্ট মানদণ্ডে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তা বাজারজাত করার অনুমোদনপ্রাপ্ত।

তবে এই মানচিহ্ন ব্যবহার করতে হলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই নিতে হয় সার্টিফিকেশন মার্ক (সিএম) লাইসেন্স। বিএসটিআইয়ের আওতায় এই লাইসেন্স প্রদানের জন্য রয়েছে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন, আবেদন প্রক্রিয়া ও ফি কাঠামো।


সিএম লাইসেন্স কী?

সিএম লাইসেন্স হচ্ছে বিএসটিআই কর্তৃক প্রদত্ত একটি অনুমোদন, যা ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যে বিএসটিআই মানচিহ্ন ব্যবহার করতে পারে না। এটি পণ্যের মান ও নিরাপত্তার স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ, এই লাইসেন্সপ্রাপ্ত পণ্য বাজারে গেলে ভোক্তা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছে।


আবেদন প্রক্রিয়া

সিএম লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হলে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়:

  1. অনলাইন আবেদন:
    • প্রথমে বিএসটিআই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
    • “বিএসটিআইর সেবাসমূহ” অপশন থেকে “সিএম লাইসেন্স প্রদান বা নবায়ন” বিভাগে যেতে হবে।
    • এখানে গিয়ে “অনলাইন আবেদন” অপশনে ক্লিক করলে নতুন একটি উইন্ডো (BSTI App) খুলবে।
    • আবেদনকারীকে সেখানে নিবন্ধন (Sign-up) করে ফরম পূরণ করতে হবে।
  2. কারখানা পরিদর্শন ও নমুনা পরীক্ষা:
    • আবেদন জমা দেওয়ার পর বিএসটিআই কারখানা পরিদর্শন করবে।
    • পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হবে।
    • পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে এবং রিপোর্ট মূল্যায়ন শেষে অনুমোদন দেওয়া হবে।
  3. ফি প্রদান ও লাইসেন্স ইস্যু:
    • অনুমোদনের পর আবেদনকারীর কাছে বিল ইস্যু করা হবে।
    • ফি পরিশোধ করার পর প্রতিষ্ঠানকে সিএম লাইসেন্স প্রদান করবে বিএসটিআই।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

আবেদনের সঙ্গে কিছু নথি জমা দিতে হয়, যেমন:

  • হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স
  • ট্রেড মার্ক বা শিল্পনকশার কাগজপত্র
  • ভ্যাট ও টিআইএন সনদ
  • খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে প্রিমিসেস লাইসেন্স
  • পণ্যের বাংলা লেবেল ও বিস্তারিত তথ্য, যেমন—
    • পণ্যের নাম, ব্র্যান্ড, ওজন
    • উপাদান, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ
    • ব্যাচ নম্বর, উৎপাদনকারীর ঠিকানা
    • সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য
    • বিডিএস নম্বর অনুযায়ী মানচিহ্ন

ফি কাঠামো

  • নতুন লাইসেন্স আবেদন ফি: ১,০০০ টাকা
  • নবায়ন ফি: ৫০০ টাকা
  • বার্ষিক লাইসেন্স ফি: ২০০ টাকা

এ ছাড়া মার্কিং ফি রয়েছে:

  • ফল–জাতীয় পণ্যে: ন্যূনতম ১,২৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
  • অন্যান্য পণ্যে: ন্যূনতম ১,৮৭৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।

সময়সীমা

আবেদন প্রক্রিয়া ন্যূনতম ১৯ কার্যদিবস থেকে সর্বোচ্চ ৪২ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন হয়। ফি জমা দিতে হবে ডিমান্ড ড্রাফট (ডিডি), পে-অর্ডার বা নগদ অর্থে বিএসটিআই ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টারে।


কেন সিএম লাইসেন্স গুরুত্বপূর্ণ?

  • এটি ভোক্তার কাছে পণ্যের প্রতি আস্থা তৈরি করে।
  • ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্যের ঝুঁকি কমায়।
  • আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে রপ্তানির ক্ষেত্রে সুবিধা দেয়।
  • প্রতিষ্ঠানকে আইনত সুরক্ষা প্রদান করে।

বাংলাদেশে মানসম্মত ও নিরাপদ পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিএসটিআইয়ের সিএম লাইসেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাজারে টিকে থাকতে চাইলে এবং ভোক্তার আস্থা অর্জন করতে চাইলে এই লাইসেন্স নেওয়া অপরিহার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *