ডাকসু নির্বাচন: ব্যালট বিভ্রাটে পোলিং অফিসারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি

ডাকসু নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ব্যালট বিভ্রাটের জেরে পোলিং অফিসারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট বিভ্রাটের ঘটনায় পোলিং অফিসারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে প্রশাসন। ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন শিক্ষা ডেস্ক:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরে এক পোলিং অফিসারকে তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে কার্জন হলের দ্বিতীয় তলায় স্থাপিত অমর একুশে হলের ভোটকেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের উপ-পরিচালক ফররুখ মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ঘটনার অভিযোগকারী ভোটারও বুঝতে পেরেছেন এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল ছিল। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে যাতে ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা অক্ষুণ্ণ থাকে।


কী ঘটেছিল ভোটকেন্দ্রে?

ঘটনার সূত্রপাত হয় তখনই যখন একজন শিক্ষার্থীকে ভুলবশত দুইটি ব্যালট পেপার দেন পোলিং অফিসার জিয়াউর রহমান চৌধুরী। ওই শিক্ষার্থী উভয় ব্যালট পূরণ করেন। পরে একটি ব্যালট বাক্সে জমা দিলেও আরেকটি টেবিলে রেখে দেন।

কিছুক্ষণ পর আরেকজন ভোটার এলে ভুলক্রমে সেই পূর্ণ করা ব্যালট তাকে দেওয়ার চেষ্টা করেন অফিসার। তবে ভোটার বিষয়টি বুঝতে পেরে ব্যালট ফেরত দেন। সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে অভিযোগ ওঠে।

কেন্দ্রে উপস্থিত সীমা আক্তারের পোলিং এজেন্ট রাজিমুল ইসলাম এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন এজেন্ট জানান, বিষয়টি প্রথমে বিভ্রাট তৈরি করলেও দ্রুত সমাধান করা হয়। অভিযোগকারীরা নিজেরাই পরবর্তীতে স্বীকার করেন যে পরিস্থিতি ভালোভাবে সামলানো হয়েছে।


পোলিং অফিসারের বক্তব্য

ঘটনায় অভিযুক্ত পোলিং অফিসার জিয়াউর রহমান চৌধুরী বলেন,
“এটি পুরোপুরি অনিচ্ছাকৃত একটি ভুল। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু করিনি।”

তবে ভুল স্বীকার করলেও তাকে আর দায়িত্বে রাখা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে অব্যাহতি দেয়।


বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে। যেকোনো ধরনের অনিয়ম বা অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।

ফররুখ মাহমুদ বলেন,
“নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বদ্ধপরিকর। অভিযোগ যেই করুক না কেন, প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


ডাকসু নির্বাচনের চিত্র

এবারের ডাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১৮ হাজার ৯৫৯ জন এবং ছাত্র ২০ হাজার ৯১৫ জন

  • ডাকসুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা: ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭১ জন
  • হল সংসদ নির্বাচন: প্রতিটি হলে ১৩টি পদে নির্বাচন হচ্ছে। মোট ১৮টি হলে ২৩৪টি পদে প্রার্থী হয়েছেন ১ হাজার ৩৫ জন
  • ভোট প্রক্রিয়া: প্রতিটি ভোটারকে এবার ৪১টি ভোট দিতে হবে। তবে সময় দেওয়া হচ্ছে মাত্র ১০ মিনিট

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোটারদের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জিং প্রক্রিয়া হলেও প্রশাসন যথাসম্ভব সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করছে।


ঘটনার তাৎপর্য

এই ব্যালট বিভ্রাটের ঘটনা প্রমাণ করে যে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় সামান্য অসতর্কতাও বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। তবে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি জটিল পরিস্থিতি এড়াতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই ধরনের দায়িত্বশীলতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও আস্থার জায়গা নিশ্চিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *