অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫: রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবারও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে দুর্বৃত্তরা এই হামলা চালায়। ঘটনার পর জাপার মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে গণ অধিকার পরিষদকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে সংগঠনটিকে অবিলম্বে ব্যান করার দাবি জানান।
হামলার প্রেক্ষাপট
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণ অধিকার পরিষদ এক সংহতি সমাবেশ করে। তারা জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয় এবং বিজয়নগরের দিকে অগ্রসর হয়। মিছিল থেকে বিজয়নগরে পৌঁছানোর পরই জাপার কার্যালয়ে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির নেতারা।
হামলাকারীরা প্রথমে কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে তারা অফিসের ভেতরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ও কয়েক জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে মুহূর্তেই ভবনটিতে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং আশপাশের সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা
সংবাদ পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে জলকামান থেকে পানি ছুড়ে এবং একাধিক সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। যদিও আগুন নেভাতে সক্ষম হলেও কার্যালয়ের ভেতরের বেশ কিছু আসবাবপত্র ও নথিপত্র পুড়ে যায়।
মহাসচিবের কঠোর বক্তব্য
ঘটনার পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“বারবার জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। এর পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে। নির্বাচনে জাপা অংশ নিলে অন্য দলগুলোর পরাজয় অনিবার্য হবে, তাই ভয় দেখাতে হামলা করা হচ্ছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “গণ অধিকার পরিষদ মূলত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। এই সংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিজয়নগরে হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
বর্তমানে জাপা কার্যালয়ের আশপাশে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এলাকা এখনো থমথমে। সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাবের টহল চলছে।
পূর্ববর্তী হামলা
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একই কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একদল লোক আকস্মিকভাবে জাপার অফিসে ঢুকে ভাঙচুর চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। কয়েক দিনের ব্যবধানে আবারো একই ধরনের ঘটনা ঘটায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টিকে ঘিরে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে জাপার দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। ধারাবাহিক হামলা ও পাল্টা অভিযোগ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভিন্নমত প্রকাশের জায়গা থাকলেও সহিংসতা গণতন্ত্রকে দুর্বল করে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দমন করতে সহিংসতার পথ বেছে নিলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়, যার প্রভাব পড়ে অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনে।
সাধারণ মানুষের ক্ষোভ
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিবার হামলার সময় তারা ভয় পেয়ে যান। ধোঁয়া, আগুন ও পুলিশের গ্রেনেড ছোড়ার শব্দে এলাকা রণক্ষেত্রের মতো হয়ে ওঠে। ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন, কারণ দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বাধ্য হন তারা।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ধারাবাহিক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনকে আবারও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একদিকে জাপার দাবি গণ অধিকার পরিষদকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে, অন্যদিকে গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের অভিযোগ—জাপা জনগণের গণআন্দোলন দমাতে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক মহলের দায়িত্বশীল ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। সহিংসতার মাধ্যমে নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান করতে হবে—এমনটাই মনে করেন শান্তিকামী সাধারণ মানুষ।
