অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীতে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনাসহ নির্দিষ্ট এলাকাগুলোতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে, যা ৭ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
কেন এই নিষেধাজ্ঞা?
ডিএমপি জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি বা সমাবেশ হলে তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে সচিবালয় ও যমুনা ভবন ঘিরে নানান সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায়ই অনুষ্ঠিত হয়। তাই প্রশাসন আগেভাগেই ব্যবস্থা নিয়েছে।
কোন কোন এলাকায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর?
গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সচিবালয় সংলগ্ন এলাকা এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে—
- হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং
- কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং
- অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং
- মিন্টো রোড ক্রসিং
এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কচত্বর এবং এর মধ্যবর্তী এলাকা সভা-সমাবেশমুক্ত থাকবে।
আইনগত ভিত্তি
ডিএমপি অধ্যাদেশের ২৯ ধারায় কমিশনারকে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রযোজ্য ক্ষেত্রেই এ ধারার আওতায় এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। অতীতে জাতীয় নির্বাচন, বড় উৎসব বা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফরের সময়েও অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
রাজধানীর রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সংগঠনগুলো প্রায়শই সচিবালয় ঘিরে অবস্থান কর্মসূচি নেয়। তবে নতুন এই নির্দেশনার ফলে তারা বাধ্য থাকবে বিকল্প ভেন্যু খুঁজতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসনের এ পদক্ষেপ স্বাভাবিক হলেও এটি গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চায় সীমাবদ্ধতা তৈরি করবে।
সাধারণ নাগরিকদের মতে, হঠাৎ করে সড়কে অবরোধ, মিছিল বা মানববন্ধন হলে যানজট ও ভোগান্তি বাড়ে। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা অন্তত কিছুটা স্বস্তি আনবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য নির্ধারিত স্থান রাখা উচিত।
আগামীর চ্যালেঞ্জ
এখন প্রশ্ন হলো, কতদিন এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে—‘পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত’। অর্থাৎ পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার বা শিথিল করতে পারে। তবে রাজধানীর রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বা আন্দোলন তীব্র হলে এ নিষেধাজ্ঞা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।
ডিএমপি’র এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে রাজধানীতে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে তাৎক্ষণিক সমাধান দেবে। তবে সভা-সমাবেশ গণতন্ত্রের অন্যতম হাতিয়ার। তাই প্রশাসনের উচিত হবে ভবিষ্যতে এমন একটি কাঠামো তৈরি করা, যাতে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষিত থাকে এবং একই সঙ্গে জনশৃঙ্খলা অক্ষুণ্ণ রাখা যায়।
