উত্তাল সাগর: ৬ জেলায় রাতের মধ্যে ঝড়ের শঙ্কা, সতর্কবার্তা জারি করলো আবহাওয়া দফতর

উত্তাল সাগর, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ৬ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, রাতেই ঝড়ের আশঙ্কা—৬ জেলায় সতর্কতা, ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

ঢাকা, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫:
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আবারও প্রকৃতির হুঁশিয়ারি। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাগর। রাতের মধ্যে দেশের ছয়টি জেলায় ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

বুধবার বিকেলে অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেয়া সতর্কবার্তায় বলা হয়, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, যশোর এবং কুমিল্লা অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর সতর্ক সংকেত

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সকালে দেয়া সমুদ্রবন্দরের বিশেষ সতর্কবার্তায় উল্লেখ করা হয়, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্য বেড়েছে এবং আবহাওয়া অস্থির হয়ে উঠেছে।

এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

মৎস্যজীবীদের জন্য নির্দেশনা

লঘুচাপের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আবহাওয়া দফতর জোর দিয়ে জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে হবে।

ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলো

খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী দীর্ঘদিন ধরেই প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। প্রতিবার ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস বা লঘুচাপের প্রভাবে এসব অঞ্চলের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ছাড়া নোয়াখালী, যশোর ও কুমিল্লায়ও ঝড়বৃষ্টির কারণে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কৃষি, ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে নদী ও সাগর তীরবর্তী মানুষদের দুর্ভোগ বাড়ে। লঘুচাপ বড় আকার ধারণ করলে তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ফলে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয়

সরকারি ও স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্কবার্তা অনুযায়ী প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হবে।

মানুষের দুর্ভোগ

এ অবস্থায় উপকূলীয় এলাকার সাধারণ মানুষ ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক জেলাজুড়ে নৌযান চলাচল আংশিক বন্ধ হয়ে গেছে। জেলেরা গভীর সমুদ্র থেকে নৌকা ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছেন। উপকূলীয় এলাকায় নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় মানুষরা প্রায়ই প্রকৃতির নির্মমতার শিকার হয়। আবহাওয়া দফতরের এই সতর্কবার্তা শুধু একটি বার্তা নয়—এটি একটি বাস্তবতা, যা উপকূলীয় মানুষের প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারের লঘুচাপ কতটা ভয়ংকর রূপ নেবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে যথাসময়ে পদক্ষেপ নিলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *