অনলাইন ডেস্ক:
চীনের রাজধানী বেইজিং আজ বুধবার পরিণত হয়েছিল বিশ্ব রাজনীতি ও সামরিক শক্তি প্রদর্শনের এক মহামঞ্চে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের দিনটিকে ঘিরে আয়োজিত বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের বহু রাষ্ট্রনেতা। এর মধ্যে বিশেষভাবে আলোচনায় ছিলেন তিন শীর্ষ নেতা—চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন।
২০১৯ সালের পর এটাই কিম জং–উনের প্রথম চীন সফর, আর এই প্রথমবারের মতো একসঙ্গে একই মঞ্চে বসেছেন চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার এই তিন নেতা। কুচকাওয়াজ চলাকালে সি ও কিমকে পাশাপাশি বসে আলাপ করতে দেখা গেছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে নতুন বার্তার ইঙ্গিত দিয়েছে।
আমন্ত্রিত রাষ্ট্রনেতারা
চীনের স্টেট কাউন্সিল জানায়, কুচকাওয়াজে উপস্থিত থাকার জন্য মোট ২৬ জন রাষ্ট্রনেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—
- ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট লুয়ং কুয়ং
- বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো
- ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান
- জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মনানগাগওয়া
- সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার ভুচিচ
- কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ ক্যানেল
- মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মিন অং হ্লাইং
- মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম
- পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ
- স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো
যদিও আমন্ত্রিত সবাই যে উপস্থিত ছিলেন তা নিশ্চিত করতে পারেনি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
সি চিন পিংয়ের বার্তা
কুচকাওয়াজের শুরুতে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন—
“অপ্রতিরোধ্য চীনকে কোনোভাবেই ভয় দেখানো যাবে না।”
তিনি স্পষ্ট করে জানান, চীন তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা দিন দিন শক্তিশালী করছে এবং দেশটির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনো ছাড় দেবে না।
নতুন অস্ত্রের প্রদর্শন
চীনের সামরিক কুচকাওয়াজ সবসময়ই নজর কাড়ে নতুন প্রযুক্তি ও অস্ত্রশস্ত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে। এবারের আয়োজনে বিশেষভাবে যেসব অস্ত্র আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি কেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—
- লেজার অস্ত্র → যা যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুত ও নিখুঁত হামলার জন্য তৈরি।
- পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র → দীর্ঘ পাল্লার বিধ্বংসী অস্ত্র, যা বিশ্বশক্তির সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- পানির নিচে পরিচালিত ড্রোন → বিশাল আকারের সাবমেরিন-ড্রোন, যা গোপন অভিযানে সক্ষম।
এইসব অস্ত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে চীন জানিয়ে দিল যে, প্রযুক্তি ও সামরিক সক্ষমতায় তারা এখন অনেক এগিয়ে গেছে।
ভূরাজনৈতিক তাৎপর্য
চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতাদের একসঙ্গে উপস্থিতি শুধু কুচকাওয়াজ নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক বড় বার্তা।
- যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই সমাবেশকে দেখা হচ্ছে এক ধরনের ঐক্য প্রদর্শন হিসেবে।
- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের অবস্থান আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
- কিম জং–উনের উপস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে উত্তর কোরিয়া আবারও সক্রিয়ভাবে চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে অবস্থান নিতে চাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই কুচকাওয়াজ মূলত ক্ষমতা প্রদর্শনের কূটনৈতিক কৌশল। যেখানে চীন শুধু সামরিক শক্তিই নয়, রাজনৈতিক বার্তাও দিয়েছে—
- তারা কোনো বৈশ্বিক চাপকে ভয় পায় না।
- তাদের জোট আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
- নতুন প্রজন্মের সামরিক প্রযুক্তি দিয়ে তারা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত।
চীনের বেইজিং কুচকাওয়াজ তাই শুধু সামরিক মহড়া নয়, বরং বিশ্বকে দেখানোর মতো এক রাজনৈতিক বার্তা।
- একদিকে অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তি,
- অন্যদিকে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মতো মিত্রদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক।
সি চিন পিংয়ের ভাষণ এবং নতুন অস্ত্র প্রদর্শন স্পষ্ট করে দিয়েছে—চীন এখন বিশ্বমঞ্চে শক্তি প্রদর্শনকারী এক অনিবার্য শক্তি।
