ফের বাড়লো স্বর্ণের দাম: আজ থেকে কার্যকর নতুন মূল্য

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি – স্বর্ণের বার ও দাম বৃদ্ধির গ্রাফ সুদের হার কমার প্রত্যাশায় বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম নতুন উচ্চতায়, ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

তারিখ: ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার


ভূমিকা

দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) সোমবার রাতে নতুন দাম ঘোষণা করেছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) থেকে স্বর্ণ বিক্রি হবে নতুন দামে। তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত থাকছে।

সবশেষ ঘোষণায় ভরিতে ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ৪৮ বার সমন্বয় হলো স্বর্ণের দাম।


নতুন দাম কত হলো?

বাজুসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম হবে—

  • ২২ ক্যারেট: ভরিতে ১,৭৫,৭৮৮ টাকা
  • ২১ ক্যারেট: ভরিতে ১,৬৭,৭৯৮ টাকা
  • ১৮ ক্যারেট: ভরিতে ১,৪৩,৮২৯ টাকা
  • সনাতন পদ্ধতি: ভরিতে ১,১৯,০৪৩ টাকা

এর সঙ্গে যুক্ত হবে সরকারি নির্ধারিত ৫% ভ্যাট এবং বাজুসের ন্যূনতম ৬% মজুরি। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।


আগের দাম কত ছিল?

এর আগে, গত ৩০ আগস্ট দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। তখন ভরিতে ১,৬৬৭ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। সেই হিসাবে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছিল ১,৭৪,৩১৮ টাকা

তাহলে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে আবারও দাম বাড়লো প্রায় দেড় হাজার টাকা।


বছরে কতবার পরিবর্তন হলো?

২০২৫ সালে এ পর্যন্ত স্বর্ণের দাম ৪৮ বার সমন্বয় করেছে বাজুস। এর মধ্যে—

  • ৩২ বার বেড়েছে দাম
  • ১৬ বার কমেছে দাম

অন্যদিকে, ২০২৪ সালে মোট ৬২ বার সমন্বয় হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৫ বার দাম বেড়েছিল, ২৭ বার কমেছিল।


স্বর্ণের দাম কেন বাড়ছে?

স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য প্রতিনিয়ত ওঠানামা করছে। বাংলাদেশে দাম নির্ধারণে প্রধানত তিনটি বিষয় প্রভাব ফেলে—

  1. আন্তর্জাতিক বাজার: ডলারের বিনিময় হার ও বিশ্ববাজারে স্বর্ণের মূল্য।
  2. আমদানি ব্যয়: ডলারের দাম বাড়লে আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যায়।
  3. চাহিদা ও সরবরাহ: উৎসব মৌসুম, বিয়ে-শাদি বা বিনিয়োগের কারণে চাহিদা বাড়লে দামও বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলার সংকট এবং বিশ্ববাজারের অস্থিরতার কারণে দেশে বারবার দাম বাড়ছে।


রুপার দাম অপরিবর্তিত

স্বর্ণের দাম বাড়লেও রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে বর্তমানে—

  • ২২ ক্যারেট রুপা: ভরিতে ২,৮১১ টাকা
  • ২১ ক্যারেট রুপা: ভরিতে ২,৬৮৩ টাকা
  • ১৮ ক্যারেট রুপা: ভরিতে ২,২৯৮ টাকা
  • সনাতন পদ্ধতি রুপা: ভরিতে ১,৭২৬ টাকা

ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া

বাজারে স্বর্ণের ক্রেতারা দাম বাড়াকে স্বাভাবিক মনে করলেও অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতে, স্বর্ণ এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

একজন ক্রেতা বলেন—

“বিয়ের মৌসুমে গহনা কেনার পরিকল্পনা করেছিলাম, কিন্তু বারবার দাম বাড়ায় এখন তা কঠিন হয়ে পড়ছে।”

অন্যদিকে, ব্যবসায়ীদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে দেশের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।


অর্থনীতিতে প্রভাব

স্বর্ণ কেবল গহনা নয়, বরং এক প্রকার বিনিয়োগ। দামের উত্থান-পতন অর্থনীতিতে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে।

  • বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণে ঝুঁকেন।
  • স্বর্ণের দাম বাড়লে রিজার্ভে চাপ পড়ে।
  • ডলার সংকটের সময় স্বর্ণের আমদানিতে সমস্যা তৈরি হয়।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলার বাজার স্থিতিশীল না হলে স্বর্ণের দামও স্থিতিশীল হবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে যদি দাম আরও বাড়ে, তবে দেশের বাজারেও তা প্রভাব ফেলবে। তবে বৈশ্বিক অর্থনীতি স্বাভাবিক হলে দাম কমার সম্ভাবনাও রয়েছে।


উপসংহার

আজ থেকে কার্যকর নতুন দামে স্বর্ণ বিক্রি হবে দেশের বাজারে। ভোক্তাদের জন্য এটি একটি চাপের খবর হলেও বাস্তবতা হলো আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে বাংলাদেশের হাতেও খুব বেশি কিছু করার সুযোগ নেই।

একদিকে ভোক্তাদের হতাশা, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের বাধ্যবাধকতা—এই দুইয়ের মাঝে স্বর্ণের বাজার বারবার দুলছে। তাই সচেতন ভোক্তাদের এখন কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নিতে হবে হিসেব-নিকেশ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *