“আলাস্কার বৈঠক: অনিশ্চয়তার যুগে রাশিয়া–আমেরিকা সংলাপের গুরুত্ব”

আলাস্কায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের বৈঠক, যেখানে ভবিষ্যত বিশ্বরাজনীতির অনিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনায় বসেছেন তারা। পারমাণবিক যুগে রাশিয়া–আমেরিকার সংলাপ কেবল দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নয়; এটি মানবজাতির টিকে থাকার অন্যতম শর্ত।

তথ্যসূত্র: আরটি

রোমান বা চীনা সম্রাটেরা যদি তৃতীয় শতকে আলোচনায় বসতেন, দুনিয়ার ভাগ্যে তার তেমন প্রভাব পড়ত না। কারণ, সে সময় কোনো সাম্রাজ্যই একটি যুদ্ধের মাধ্যমে পুরো পৃথিবী জয় করতে পারত না। কিন্তু আজকের বিশ্বে চিত্র ভিন্ন। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে এমন সামরিক ও পারমাণবিক ক্ষমতা, যা পৃথিবীর ভবিষ্যতকে কয়েক মুহূর্তেই বদলে দিতে পারে। গত তিন বছরে এই দুই পরাশক্তি এমন এক অবস্থানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখান থেকে ফেরার পথ নেই। এ কারণেই আলাস্কার বৈঠক বড় কোনো সাফল্য না আনলেও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এই বৈঠককে কেবল একটি দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটি মূলত পারমাণবিক যুগের বাস্তবতার প্রতিফলন। মানবজাতি আজ কতটা বিপর্যয়ের কাছাকাছি বা দূরে রয়েছে—তারই ইঙ্গিত বহন করে এমন সংলাপ। যুক্তরাষ্ট্র এখানে শুধু নিজের স্বার্থেই নয়, পুরো পশ্চিমা জোটের প্রতিনিধিত্ব করছে। এমনকি কৌশলগত প্রশ্নে যুক্তরাজ্য কিংবা ফ্রান্সের মতো পারমাণবিক শক্তিধর দেশও ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে রাশিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বহু দেশ, যারা পশ্চিমাদের আধিপত্যে ক্লান্ত, কিন্তু একা সেই কাঠামো ভাঙার সামর্থ্য রাখে না।

তাহলে কি আলাস্কা থেকে নতুন কোনো বিশ্বব্যবস্থার জন্ম হবে? সম্ভবত না। স্থায়ী বিশ্বব্যবস্থার ধারণা আজ ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসছে। কারণ, কোনো শক্তিই এককভাবে সেটি বজায় রাখার মতো ক্ষমতাধর নয়। বিশ্বরাজনীতি ক্রমশ এগোচ্ছে আরও অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে।

এই বৈঠক থেকে তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান আসবে না। বরং শুরু হবে দীর্ঘ ও জটিল আলোচনার পথ। কিন্তু ইতিহাস মনে করিয়ে দেয়—যখন পৃথিবীর দুই অজেয় শক্তি মুখোমুখি হয়, তখন সরাসরি সংলাপই মানবজাতির ভবিষ্যত টিকিয়ে রাখার একমাত্র উপায় হয়ে ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *