জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফল প্রকাশ: পাসের হার ৬৮.৬৭%

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফল প্রকাশ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ও পাসের হার তথ্য। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চূড়ান্ত ফল প্রকাশ—৮৭৩ কলেজের পরীক্ষার্থীর মধ্যে গড় পাসের হার ৬৮.৬৭%।

অনলাইন ডেস্ক:

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের অনুমোদনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত এই ফলাফল প্রকাশের খবরটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবার মাঝে স্বস্তি ও প্রত্যাশার নতুন বার্তা নিয়ে এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এনামুল করিম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২৩ সালের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নেয় সারা দেশের ৩১টি অনার্স বিষয়ে অধ্যয়নরত মোট দুই লাখ ৫৬ হাজার ৫৯১ জন পরীক্ষার্থী। এ পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা দেশের ৮৭৩টি কলেজের বিভিন্ন অনার্স বিভাগে অধ্যয়নরত ছিল। সবকটি পরীক্ষার ফলাফল যাচাই-বাছাই শেষে গড় পাসের হার নির্ধারিত হয়েছে ৬৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। যা গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে এবং অনেক কলেজেই সন্তোষজনক পাসের হার লক্ষ্য করা গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (www.nu.ac.bd) এবং ফলাফল প্ল্যাটফর্মে (http://result.nu.ac.bd) শিক্ষার্থীরা পৃথকভাবে তাদের রেজাল্ট দেখতে পারবেন। এছাড়া SMS-এর মাধ্যমেও ফলাফল দেখার সুযোগ রাখা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়। ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই সারাদেশের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে লগইন করে তাদের ফলাফল জানতে শুরু করেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরীক্ষা মূল্যায়ন, নম্বর প্রদান, হিসাবরক্ষণসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ করে থাকে। তবে এত বৃহৎ পরিসরের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বয়। এবারের ফল প্রকাশেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়।

ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে একাডেমিক অগ্রগতি এগিয়ে নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, যেসব শিক্ষার্থীর ফলাফলে কোনো ধরনের অসঙ্গতি, ভুলত্রুটি বা তথ্যগত সমস্যা পরিলক্ষিত হবে, সেসব অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। প্রয়োজনে ভুল সংশোধন কিংবা ফলাফল সম্পূর্ণ বাতিল করার ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা এবং ফলাফল প্রদানে নির্ভুলতা নিশ্চিত করার প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।

এবারের ফল প্রকাশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো চার বর্ষের সমন্বিত ফলাফল বা সিজিপিএ (CGPA) প্রকাশের ঘোষণা। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চার বছরের সমন্বিত ফলাফল খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক পারফরম্যান্স সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাবেন। সিজিপিএ জানার মাধ্যমে অনেকেই উচ্চশিক্ষা, সরকারি-বেসরকারি চাকরির আবেদন কিংবা বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হবেন।

অন্যদিকে ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় ভিন্ন রকম। যারা ভালো ফল করেছেন তাদের আনন্দের সীমা নেই। অনেকেই মনে করছেন কঠোর পরিশ্রমের সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে। তবে যারা প্রত্যাশিত ফল পাননি, তারা পুনঃমূল্যায়নের আবেদন করতে আগ্রহী। ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি, পরীক্ষার সকল পত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা জরুরি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, পুনঃমূল্যায়ন বা পুনঃনিরীক্ষার সুযোগ সব শিক্ষার্থীর জন্যই উন্মুক্ত রাখা হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা সাধারণত শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক। কারণ এই ফলাফল নির্ধারণ করে স্নাতক ডিগ্রির সমাপ্তির পাশাপাশি ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার পরিকল্পনাও। শিক্ষার্থীদের চাকরির আবেদন, বিসিএস পরীক্ষা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, মাস্টার্স ভর্তি কিংবা বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে এ ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এবারের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফল প্রকাশ এমন এক সময় হলো যখন দেশজুড়ে শিক্ষার অগ্রগতি ও ডিজিটাল সুবিধার প্রসার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের সহায়তায় দ্রুত সময়ে মূল্যায়ন শেষ করে নির্দিষ্ট সময়ে ফল প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে প্রশাসন। এতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন অপেক্ষার শঙ্কা দূর হয়েছে।

ফলাফল প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছে। কেউ আনন্দের খবর জানাচ্ছেন, কেউ বা নতুন পরিকল্পনার দিক নির্দেশনা খুঁজছেন। অনেকেই বলছেন, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ নতুন এক যাত্রার সূচনা; যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের সামনে যেমন উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে, তেমনি কর্মক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশের বিপুল সম্ভাবনাও অপেক্ষা করছে।

সব মিলিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফলাফল প্রকাশ শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি এবং নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা। এবার শিক্ষার্থীদের একমাত্র অপেক্ষা চার বর্ষের সমন্বিত সিজিপিএ ফলাফল প্রকাশের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই সেটিও প্রকাশ করা হবে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি বছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে শিক্ষা কার্যক্রমে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করছে। এই ফল প্রকাশ সেই ধারাবাহিক অগ্রযাত্রার আরেকটি সফল মাইলফলক। শিক্ষার মানোন্নয়ন, সেশন জট কমানো এবং সঠিক সময়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা গ্রহণে এ ধরনের কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *