অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা, ৮ নভেম্বর ২০২৫: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এখন ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য ‘অস্তিত্বের হুমকি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ট্রেস কনসাল্টিং আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপের বিষয় ছিল— “রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলিত করতে পারে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ট্রেস কনসাল্টিং-এর সিইও ফুয়াদ এম খালিদ হোসেন, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম।
শেখ হাসিনার বক্তব্যে উদ্বেগ
শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এখনও জুলাই মাসের গণআন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তিনি বলেন,
“যখন কাউকে ‘সন্ত্রাসী’ বলা হয়, তখন তাকে আসলে হত্যাযোগ্য বলে চিহ্নিত করা হয়। শেখ হাসিনা কি ১৮ কোটি মানুষকে শত্রু বানিয়ে আবার ক্ষমতায় ফিরতে চান?”
তিনি সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খানের লেখা উদ্ধৃত করে বলেন,
“১৯৭৪ সালে শেখ মুজিব ৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে রাজাকার বলেছিলেন, আর এখন তার মেয়ে ১৮ কোটি মানুষকে সন্ত্রাসী বলছেন—এটা কল্পনাতীত।”
নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন,
“সরকার ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ নিয়ে কারও মনে সন্দেহ থাকা উচিত নয়।”
তিনি আরও বলেন,
“শাসন ব্যবস্থা ও জুলাই সনদ নিয়ে বিতর্ক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ। সংবিধান নিয়ে বিতর্ক হঠাৎ সমাধান হয় না—এটি সময়সাপেক্ষ।”
ঐক্যের আহ্বান
প্রেস সচিব বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে, তবে অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন,
“আমরা এখন একটি ভাঙা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আছি। ডান, বাম ও মধ্যপন্থী সব দলকেই একসাথে কাজ করতে হবে—গণতান্ত্রিক সমাধান খুঁজতে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিতরা
আলোচনাটি পরিচালনা করেন ড. সাহাব এনাম খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক। অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শফিকুল আলমের বক্তব্য বর্তমান সময়ের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের একনায়কতান্ত্রিক মনোভাবের সমালোচনা করে বলেছেন—এমন আচরণ জনগণকে বিভক্ত করছে এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ধ্বংস করছে।
এখন সময় এসেছে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সীমা ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার। কেবল দলীয় স্বার্থ নয়, গণতন্ত্র ও জনগণের স্বার্থেই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
তিনি যে বার্তা দিয়েছেন, তা স্পষ্ট—
“বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন গণতান্ত্রিক ঐক্যই একমাত্র পথ।”
সারসংক্ষেপ
- আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড গণতন্ত্রের জন্য হুমকি: শফিকুল আলম
- শেখ হাসিনার বক্তব্যে জনগণকে ‘সন্ত্রাসী’ বলা হয়েছে বলে অভিযোগ
- ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি
- রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য ও সংলাপের আহ্বান
- অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নিতে পারে
