অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা, ১০ অক্টোবর ২০২৫:
বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলম অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের হাত থেকে। ফিলিস্তিন সংহতি অভিযানে অংশ নিতে গিয়ে তিনি আটক হন। কয়েকদিনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে তাঁর মুক্তির খবর পাওয়া যায়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শহিদুল আলমকে বহনকারী বিমানটি শনিবার সকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
শহিদুল আলম মুক্তি পাওয়ার পর তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে পৌঁছান শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে। সেখানে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান তাকে স্বাগত জানান।
তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আমানুর রহমান জানান, শহিদুল আলমের ঢাকাগামী ফ্লাইটটি ইস্তাম্বুল থেকে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে আসবে এবং ভোরের আগেই ঢাকায় পৌঁছাবে।
কূটনৈতিক তৎপরতায় মুক্তি
শহিদুল আলমকে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ আটক করার পরপরই বাংলাদেশ সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
সরকার জর্ডান, মিশর ও তুরস্কে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জরুরি যোগাযোগ করতে নির্দেশ দেয়।
এই কূটনৈতিক উদ্যোগের ফলেই স্বল্প সময়ের মধ্যেই মুক্তি নিশ্চিত হয় বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন শহিদুল আলমের মুক্তি ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে সহায়তার জন্য।
ইউনূস বলেন,
“বাংলাদেশ সবসময় মানবাধিকার ও শান্তির পক্ষে। শহিদুল আলম আমাদের দেশের গর্ব, তার নিরাপদ মুক্তিতে আমরা কৃতজ্ঞ।”
মানবাধিকার ও আলোকচিত্রে শহিদুল আলমের অবদান
শহিদুল আলম শুধু একজন আলোকচিত্রী নন; তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকার আন্দোলনের এক জোরালো কণ্ঠস্বর।
তিনি ড্রিক গ্যালারি ও পাথশালা মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা, যেগুলো আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
শহিদুল আলম তাঁর ক্যামেরায় শুধু সৌন্দর্য নয়, বরং সমাজের বাস্তবতা ও অন্যায়ের চিত্র তুলে ধরেছেন বারবার। তাঁর ফটোস্টোরিগুলো বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস, প্রতিবাদ ও পরিবর্তনের সাক্ষী।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাঁর কাজ প্রকাশিত হয়েছে, যেমন — The New York Times, The Guardian, Al Jazeera ইত্যাদি।
আটক ও মুক্তির প্রেক্ষাপট
ফিলিস্তিনে শান্তিপূর্ণ সংহতি অভিযানে যোগ দিতে গিয়ে তিনি ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হন।
সঙ্গে থাকা আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী ও সাংবাদিকদেরও আটক করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সরকার শুরু থেকেই ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকেও অবহিত করা হয়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন Amnesty International এবং Human Rights Watch শহিদুল আলমের আটককে “অবৈধ” ও “মানবাধিকারের পরিপন্থী” বলে নিন্দা জানিয়েছিল।
মানবিক ও নৈতিক বার্তা
শহিদুল আলমের এই ঘটনায় বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম হয়েছে।
তিনি দীর্ঘদিন ধরেই মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করে আসছেন।
২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারের সময়ও আন্তর্জাতিক সমাজ তাঁর মুক্তির দাবিতে সরব হয়েছিল।
এইবারও একইভাবে তাঁর মুক্তিতে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও কূটনৈতিক তৎপরতা কাজ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের ভাষায় —
“শহিদুল আলমের মতো মানুষরা আমাদের মনে করিয়ে দেন যে মানবতা ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলা কোনো অপরাধ নয়।”
ফেরার প্রস্তুতি ও অভ্যর্থনা পরিকল্পনা
শহিদুল আলমকে বহনকারী টার্কিশ এয়ারলাইন্সের TK-712 ফ্লাইটটি শনিবার সকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে।
ঢাকা বিমানবন্দরে তাঁর স্বজন, সহকর্মী ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
ড্রিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,
“শহিদুল আলম নিরাপদে ফিরছেন জেনে আমরা আনন্দিত। দেশে ফিরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।”
ঢাকায় অবতরণের পর তাঁকে রাজধানীর নিজ বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। সরকার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাঁর মুক্তির খবর ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
BBC, CNN, Reuters, Al Jazeera—সবগুলোই তাঁর মুক্তিকে “কূটনৈতিক সাফল্য” হিসেবে উল্লেখ করেছে।
তারা বলেছে, বাংলাদেশের দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপ এই মুক্তিকে সম্ভব করেছে, যা মানবাধিকার রক্ষায় একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।
উপসংহার
শহিদুল আলমের দেশে ফেরা শুধু একজন মানুষের ফিরে আসা নয়, এটি ন্যায়, মানবতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীকী জয়।
তিনি সবসময় বিশ্বাস করেছেন— ছবির মাধ্যমে সমাজ বদলানো যায়।
বাংলাদেশের মানুষ এখন অপেক্ষায়, কবে আবার তাঁর ক্যামেরার চোখে আমরা মানবতার গল্প দেখতে পাব।
