
বাংলাদেশের বহুল আলোচিত রাজস্ব খাত সংস্কারে বড় পরিবর্তন আসলো। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ১১টি বড় সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অভিজ্ঞরাই নেতৃত্ব দেবেন
অধ্যাদেশ অনুযায়ী এখন থেকে রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা। অর্থাৎ, সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য নীতি, পরিকল্পনা, রাজস্ব নীতি বা ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সচিব নিয়োগ দেওয়া হবে। একইভাবে, মাঠপর্যায়ে রাজস্ব আহরণ, কর, কাস্টমস ও ভ্যাট–সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এই পরিবর্তনের মাধ্যমে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং ন্যায্যতাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তাঁর ভাষায়—
“আমরা তিনটি বিষয়কে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি: যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও ন্যায্যতা।”
কেন এ পরিবর্তন জরুরি হলো
গত ১২ মে প্রকাশিত মূল অধ্যাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এতে এনবিআর কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রায় দেড় মাস ধরে আন্দোলন করেন। এর ফলে রাজস্ব আদায়ে অচলাবস্থা দেখা দেয় এবং ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ তৈরি হয়। অবশেষে সরকার কমিটি গঠন করে সংশোধনী আনে।
১১টি মূল সংশোধনী এক নজরে
১. সচিব পদে অভিজ্ঞ কর্মকর্তার নিয়োগ বাধ্যতামূলক।
২. আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমস ও আন্তর্জাতিক চুক্তি–সংক্রান্ত পদে কেবল অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ।
৩. জনপ্রশাসন, গবেষণা, পরিসংখ্যান ও আইন–সংক্রান্ত পদে সংশ্লিষ্ট খাতের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ।
৪. কর ব্যয় ও রাজস্ব আহরণের প্রভাব বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত।
৫. রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞদের সচিব নিয়োগ।
৬. মাঠপর্যায়ে রাজস্ব আইন বাস্তবায়নে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার।
৭. প্রশাসনিক পদে রাজস্ব ও জনপ্রশাসনে অভিজ্ঞ কর্মকর্তা নিয়োগ।
৮. মাঠপর্যায়ের পদে কেবল অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ।
৯. নীতিমালা, বিধি, প্রজ্ঞাপন ও নির্দেশাবলির সংশোধন–ব্যাখ্যা স্পষ্ট করা।
10. অটোমেশন দ্রুত বাস্তবায়ন ও আন্তঃদপ্তর সমন্বয় নিশ্চিতকরণ।
11. এনবিআর জনবল নতুন বিভাগে বিধি অনুযায়ী পদায়ন।
ব্যবসা ও অর্থনীতিতে প্রভাব
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই সংশোধনীগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব আহরণ দক্ষ হবে এবং কর ফাঁকি কমবে। ব্যবসায়ীরাও আশা করছেন, অভিজ্ঞ নেতৃত্বে প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস পাবে এবং রাজস্ব আহরণের গতি বাড়বে।
উপসংহার
রাজস্ব খাতের এই নতুন সংস্কার অধ্যাদেশ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা শক্তিশালী করতে পারে। অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে রাজস্ব খাত নতুন আস্থার জায়গা তৈরি করবে।