রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় বাণিজ্যে গতি: চট্টগ্রাম কাস্টমস-বন্দরে নতুন রেকর্ড

চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য নামানো হচ্ছে, নতুন ট্যারিফ নিয়ে ব্যস্ত বন্দর এলাকা। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে পণ্য খালাসের দৃশ্য—নতুন ট্যারিফ নিয়ে ব্যবসায়ীদের আপত্তি বাড়ছে। ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় ফেরেছে বাণিজ্যের গতি

দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরেছে, আর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রথম তিন মাসে তারা ১৯ হাজার ৯০২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে।
এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ হাজার কোটি টাকা বেশি

শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই আদায় হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি—যা এক মাসে নতুন রেকর্ড।


বন্দরে রেকর্ড পণ্য হ্যান্ডলিং

রাজস্বের এই সাফল্যের পেছনে আছে আমদানি-রফতানির গতি।
চট্টগ্রাম বন্দরে তিন মাসে:

  • ১,০৩১টি জাহাজে পণ্য এসেছে ও গেছে,
  • ৯ লাখ ২৭ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে,
  • ৩ কোটি ২৯ লাখ মেট্রিক টন কার্গো পণ্য ওঠানামা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য কমোডর আমিন আহমেদ আবদুল্লাহ বলেন,

“আমদানি-রফতানিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এটি বন্দর ও দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক।”


অফডকগুলোতেও বেড়েছে কাজের চাপ

বন্দর ছাড়াও ২১টি বেসরকারি অফডক (ICD) এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।
তারা এখন আগের চেয়ে বেশি ধরনের পণ্য (৩৮টির বদলে ৬৫টি) ডেলিভারি দিচ্ছে।

গত তিন মাসে অফডকগুলোতে—

  • আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০.২৮%,
  • রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২.৪৯%

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব বলেন,

“যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কের প্রভাব এড়াতে অনেক রফতানি প্রতিষ্ঠান আগেই পণ্য পাঠিয়েছে, ফলে রফতানি বেড়েছে। আবার বেশি পণ্য ডেলিভারির অনুমতি পাওয়ায় আমদানিও বেড়েছে।”


গত বছরের অচলাবস্থা থেকে নতুন গতি

২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ দিকে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ধর্মঘটে বাণিজ্যে বিপর্যয় নেমেছিল।
রাজস্ব আদায় ও পণ্য ছাড়ের কাজ থমকে গিয়েছিল কয়েক দিন।
কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরার পর পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়।

সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ায় কাস্টমস ও বন্দরের কার্যক্রম আবারও গতি পায়।
ফলে চলতি অর্থবছরের শুরুতেই রেকর্ড রাজস্ব ও প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে।


অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত

এই প্রবৃদ্ধি শুধু রাজস্ব বাড়িয়েছে না—
এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও প্রাণ ফিরিয়েছে।

১. সরকারী রাজস্ব বৃদ্ধি:
বাজেট বাস্তবায়নে সহায়তা দিচ্ছে এই আয়।

২. ব্যবসায়িক আস্থা:
রাজনৈতিক শান্তি থাকলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হন।

৩. কর্মসংস্থান:
বন্দর, পরিবহন, ও লজিস্টিক খাতে কাজের সুযোগ বেড়েছে।

৪. বৈদেশিক মুদ্রা আয়:
রফতানি বাড়লে বিদেশ থেকে আরও ডলার আসে, যা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখে।


চট্টগ্রাম বন্দরের বিশ্ব র‌্যাংকিং

চট্টগ্রাম বন্দর এখন বিশ্বের ব্যস্ততম ১০০ বন্দরের মধ্যে ৬৮তম স্থানে রয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরটি ৩২ লাখ ৯৬ হাজার কনটেইনার১৩ কোটি ৭ লাখ মেট্রিক টন পণ্য হ্যান্ডল করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং বন্দরের অবকাঠামো আরও আধুনিক করা যায়, তাহলে অচিরেই চট্টগ্রাম বন্দর শীর্ষ ৫০-এর তালিকায় চলে আসবে।


পরিশেষ

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্থনীতির প্রাণশক্তি—এই সত্য আবারও প্রমাণ হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস হাউস দেখিয়ে দিয়েছে, শান্ত পরিবেশ থাকলে দেশের বাণিজ্য কত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের এই সাফল্য দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *