মূল প্রতিবেদন
আজ সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি—শুভ জন্মাষ্টমী। এ উপলক্ষ্যে দেশের সর্বত্র ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ ও ভক্তিমূলক পরিবেশ বিরাজ করছে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে গৃহীত কর্মসূচি ভক্তদের মাঝে উৎসবের আবহ সৃষ্টি করেছে।
ধর্মীয় তাৎপর্য
হিন্দু পুরাণ মতে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম। তখন পাশবিক শক্তি মানবজাতির সত্য, ন্যায়নীতি ও সৌন্দর্যকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল। মানবজাতির মুক্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হন। বিশ্বাস করা হয়, যুগে যুগে দুষ্টের দমন ও সত্যের প্রতিষ্ঠার জন্যই ভগবান মানুষ রূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন।
সরকারি কর্মসূচি ও বার্তা
জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন। সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন এবং বেসরকারি চ্যানেলগুলোতে সম্প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠান।
ঢাকায় কর্মসূচি
মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—সকাল ৮টায় গীতাযজ্ঞ, বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমী মিছিল এবং রাতে শ্রীকৃষ্ণ পূজা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শংকর মঠ ও মিশন গীতাযজ্ঞ পরিচালনা করবে।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আনুষ্ঠানিকভাবে জন্মাষ্টমী মিছিল উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান এবং নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মঈন খান উপস্থিত থাকবেন।
ঐতিহাসিক মিছিলটি ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে শুরু হয়ে জগন্নাথ হল, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মোড়, বঙ্গবাজার, গোলাপশাহ মাজার হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হবে।
বিশেষ আলোচনা সভা ও ইসকনের কর্মসূচি
আগামী ১৯ আগস্ট বিকেল ৩টায় ঢাকায় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) চার দিনব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ, ভজন কীর্তন, ভোগ আরতি, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় নাটক কীর্তন মেলা।
জন্মাষ্টমীর সারমর্ম
দিনটি শুধু ভক্তদের জন্য আনন্দ নয়, বরং মানবজাতির সত্য ও ন্যায়ের পথ অনুসরণের বার্তাও বহন করে। জন্মাষ্টমীর উৎসব মানুষকে ঐক্য, ন্যায় এবং মানবতার শিক্ষা দেয়।